'পুষ্পা'-এর দারুণ সাফল্যের পর আসছে 'পুষ্পা ২'। এক এক করে প্রকাশ্যে আসছে ছবির নানা গান। তবে এই সব গানগুলির মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সেটি হল 'সামি' গান। 'পুষ্পা'-তেও এই গান ছিল কিন্তু সেটা ছিল পুরোদস্তুর ড্যান্স নম্বর, কিন্তু 'পুষ্পা ২'-এর এই 'সামি' গানটি রোম্যান্টিক সং। তবে গানটি কেবল হিন্দি আর তেলেগুতে শুধু নয় বাংলা-সহ বেশ কিছু আঞ্চলিক ভাষাতেও প্রকাশ পেয়েছে। আর এর বাংলা ভার্সনটি গেয়েছেন শ্রেয়া ঘোষাল, লিরিক্স লিখেছেন শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই গান ইতিমধ্যেই অনেকেই মন ছুঁয়ে গিয়েছে কিন্তু গানটি লেখার সময়কার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? সেই গল্পই এবার সমাজ মাধ্যমের পাতায় শেয়ার করে নিলেন গীতিকার শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বাংলা গানটির লিঙ্ক শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখে জানান, 'হুক লাইনদুটো আর একটু মজা ক'রে লেখা যায়? দ্যাখো না একটু...' রেকর্ডিং আগের রাতে তাঁর কাছে এই আবদার করেছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল। কবি লেখেন, 'শ্রেয়া যখন চেন্নাই-এর গভীর রাত জেগে এই আবদার করছে, তখন নিউ জার্সিতে আমার ভরদুপুর। সেদিন সন্ধের উড়ানেই ফিলাডেলফিয়া থেকে ন্যাশভিল রওয়ানা হব আমি আর দূর্বা, পরদিন অনুষ্ঠান। দূর্বা’র মাসি আর মেসো হিমেলী-অলোকের বাড়িতে সবে উচ্ছেভাজা দিয়ে ভাত মেখেছি, তার মধ্যেই এই মিঠে গলার আর্জি। মাস দুয়েক আগে 'পুষ্পা ২'-এর সঙ্গীত পরিচালক দেবী শ্রী প্রসাদের স্টুডিওতে কিছু গান লিখে এসেছি, তারই একখানা এবার শ্রেয়ার কণ্ঠে উঠবে।'
আরও পড়ুন: বোনকে দাদার টিপস! ‘ইশক ভিশক রিবাউন্ড’ নিয়ে কাকার মেয়ে পশমিনাকে কী পরামর্শ হৃতিকের
তিনি এও জানান এই গানের ডাবিংয়ে তিনি থাকুন সেটা নির্মাতারাও চেয়েছিলেন, কিন্তু বহু আগে থেকেই তাঁর মার্কিন মুলুকের সফর ঠিক থাকার কারণে তিনি চেন্নাইতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। এই প্রসঙ্গে শ্রীজাত লেখেন, 'কিন্তু বহু আগে থেকেই এই মার্কিন-সফর নির্দিষ্ট ছিল, তাই এ-যাত্রায় চেন্নাই বাদ পড়ল। যদিও বাকি কাজ ঠিকই হল, লাইন ধরে ধরে আমার সঙ্গে গানের কথা মিলিয়ে নিল শ্রেয়া, যেখানে যেখানে খটকা, শব্দের মানে আর অভিব্যক্তি বুঝে নিল ফোনের ওপার থেকেই, প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে। অলৌকিক প্রতিভা আর মিশুকে স্বভাব যদি বাদও রাখি, কেবল খ্যাতির শীর্ষে থেকেও প্রতিটা নতুন কাজের প্রতি এই আগ্রহ আর অধ্যবসায়ের জন্যই ওকে ভালোবাসা যায়, বাসিও।'
আরও পড়ুন: ‘চেয়েছিলাম এমন কেউ করুক…’, তুমি আশেপাশে থাকলে-তে নতুন পারো রুকমা, কী বললেন অঙ্গনা?
কিন্তু শ্রীজাত জানা সব ঠিক থাকলেও সমস্যা বাঁধে হুক লাইনে। এই ব্যাপারে তিনি লেখেন, 'ঠেকল এসে হুক লাইনে। আরও জমিয়ে লেখার চেষ্টা করাই যায়, যেমনটা শ্রেয়া চাইছে, কিন্তু সময় কোথায়? চেন্নাই-এর পরদিন সকালেই গানটার ডাবিং, অর্থাৎ আমাকে নতুন লাইন লিখে পাঠাতে হবে সন্ধেবেলার মধ্যে। কিন্তু তখন তো আমি মধ্যগগনে। তার আগে এয়ারপোর্ট পৌঁছনো এবং সিকিওরিটির ঝুটঝামেলা। এসবের মধ্যে লিখবটা কখন? সমস্যাটা শ্রেয়াকে বলতে সে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিয়ে বলল, 'তুমি ঠিক পারবে'। আমি বললাম 'যদি না পারি?' নিজের হয়ে আগাম ওকালতির এই প্রশ্নের উত্তরেও জবাব এল, 'পারবেই। লিখেই আমাকে পাঠিও'। এখানেই কথা শেষ এবং উচ্ছে শুরু। মজার ব্যাপার হলো, এয়ারপোর্ট পৌঁছে জানতে পারলাম, উড়ান তিন ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে। অসম্ভব বিরক্ত লাগে আমার, ফ্লাইট ডিলেইড শব্দদুটো পাশাপাশি দেখলে। দূর্বা ততক্ষণে বাড়ির লোকজনকে জানিয়ে দিয়েছে আমাদের এই হয়রানির কথা।'
কিন্তু এই সময় তিনি কী করবেন, তখন যা ঘটল তারই ফসলেই গান, বিশেষত হুক লাইন। শ্রীজাত এই বিষয়ে লেখেন, 'ভাবছি, এই পড়ে পাওয়া তিন ঘণ্টা কীভাবে কাটাব, এমন সময়ে হিমেলী মেসেজ করলেন, 'শ্রেয়ার গানের লাইনগুলো এখন ঠিক করে নাও'। সত্যিই তো! হোমওয়র্কের কথা ভুলেই গেছিলাম। দূর্বা যতক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে দেখছে, আমি দু'খানা লাইন নতুন করে হাতমকশো করলাম। একবার লিখেই মনে হলো, এইটা হয়তো শ্রেয়ার ভাল লাগতেও পারে। আর সাত পাঁচ না-ভেবে, দিলাম পাঠিয়ে। তারপর বিলম্বিত উড়ান ধরে ন্যাশভিল পৌঁছে মাঝরাত পার ক'রে যখন ঘুমোতে যাচ্ছি, ভোরবেলার চেন্নাই থেকে স্মাইলি-সহ একখানা শব্দ এল, 'পারফেক্ট'।'
গান তৈরি হওয়ার পিছনের এই গল্প শেয়ার করে শ্রীজাত লেখেন, 'গান তো পৌঁছয় অনেকের কাছেই, গান তৈরি হবার গল্পগুলো আড়ালেই থেকে যায়। আজ তাই গান আর গল্প, দুটোই ভাগ করে নিতে ইচ্ছে হলো খুব।'