শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় ফরাসি চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ পর্বে দেখানো হল নন্দিতা দাস পরিচালিত ছবি ‘মান্টো’।
সাল ১৯৪৭, কাঁটাতারে বিভক্ত হয়ে যাওয়া দেশ ও মান্টোর ছিন্নবিচ্ছিন্ন মন, একফালি পড়ে আছে বম্বেতে আরেক ফালি লাহোরে। ব্রিটিশ শাসন ও ভোগপর্বের শেষ উদগারে বিষের মতো ছড়িয়ে পড়ে মুসলমান বিদ্বেষ। হাতের তালুর মতো চেনা বন্ধু শ্যামের মুখ থেকেও এই বিষধ্বনির উচ্চারণ ভীতি তৈরি করে মান্টোর মধ্যে। তিনি বুঝতে পারেন, এই বিদ্বেষ একটি সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের মধ্যে। প্রাণ বাঁচাতে চলে আসেন পাকিস্তান।
শুক্রবার ছবির স্ক্রিনিং শেষে নন্দনে পরিচালক ও বিশিষ্ট অভিনেত্রী নন্দিতা দাস বলেন,' 'মান্টো' কেবল উর্দু লেখক সাদাত হাসান মান্টোর জীবনী নয় বরং এটি বিভক্ত ভারতের অগ্নিদগ্ধ সময়ের আখ্যান। 'মান্টো' সেই ঢাল যাকে সামনে রেখে রিফিউজ (Refuge) নিয়েছি, তুলে ধরতে চেয়েছি বর্তমান সময়ের সংকটগুলিকেও।'
অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকিকে এই চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়ার কারণ হিসাবে নন্দিতা জানালেন, ‘নওয়াজের ব্যক্তিগত জীবন সংগ্রাম যেভাবে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে ওঁর চোখে, ওঁর ভঙ্গিমায়, তা আমাকে আন্দোলিত করে।’ যদিও ইরফান খানকেও এই চরিত্র নির্বাচনের জন্য মনোনীত করেছিলেন নন্দিতা।
আর জি কর ঘটনার প্রেক্ষিতে ছবি করতে ইচ্ছুক কি না সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই বিষয়ে ছবি করার কথা তিনি ভাবেননি। ‘তবে অন্য কেউ নিশ্চই করবেন। আর জি করের মতো ঘটনা আমাদের দেশে সর্বত্র ঘটছে। এটিই প্রথম নয়, এটিই শেষ নয়। এই সহিংসতাকে কোথাও নীরবে প্রতিপালন করেছি আমরাও’, জানালেন নন্দিতা।
‘মান্টো’-র সেন্সরশিপ প্রসঙ্গে নন্দিতা বলেন, মান্টোকে যেমন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে 'ঠাণ্ডা গোশত' অশ্লীল নয়, তাঁর সাহিত্য কোন গহীন অপরাধ নয়, সমান্তরালে নন্দিতাকেও লড়তে হয়েছে সেন্সরবোর্ডের সঙ্গে, এই ছবির মূল স্বরকে যথাসম্ভব বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টায়।
এই ছবির সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া বিষয়ে আরও বিশদে আলোচনা করেছেন, 'মান্টো অ্যান্ড আই' ( Manto & I) গ্রন্থে। ‘মান্টোর লেখাগুলিকে আমি বুনে দেওয়ার চেষ্টা করেছি ছবির বিভিন্ন অংশে।’
নন্দিতা দাস পূর্বে অভিনয় করেছেন একাধিক বাংলা ছবিতে। ‘শুভ মহরৎ’-এ তাঁকে দেখা যায় শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে এক আত্মপ্রত্যয়ী সাংবাদিকের চরিত্রে। অভিনয়, পরিচালনা ছাড়াও নন্দিতা একজন সমাজকর্মী। ৭০-এর দশকে সাফদার হাশমির থিয়েটার গোষ্ঠী ‘জন নাট্য মঞ্চ’-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
১৯৯৬-এ দাঁড়িয়ে 'ফায়ার' ছবিতে শাবানা আজমির সঙ্গে নিষিদ্ধ সমকামী প্রেমের মতো প্রথাবিরুদ্ধ ও সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা ছবিতে বরাবর অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে নন্দিতাকে।
আরও পড়ুন - Amitabh Bachchan: ফের রহস্য পোস্ট অমিতাভের! ‘থাকব নাকি যাব’, লিখলেন টুইটারে, চিন্তায় অনুরাগীরা
ভারতে মান্টোর মতো স্বল্পপঠিত এবং স্বল্পচর্চিত মানুষের জীবনী নিয়ে ছবি করা তাঁর কাছে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ ছিল, জানালেন নন্দিতা।