সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে 'পরিচয় গুপ্ত'। সেখানেই একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নজর কেড়েছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। শুক্রবার শহরের এক নামী প্রেক্ষাগৃহে হয়ে গিয়েছে ছবির প্রিমিয়ার। যদিও মুম্বইতে কর্ম ব্যস্ততার কারণে প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকতে পারেননি নায়ক। তবে এই ছবি নিয়ে তিনি দারুণ ভাবে আশাবাদী। সেই প্রসঙ্গে হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে নানা কথা ভাগ করে নিলেন নায়ক।
ছবিতে ‘উপাসক’-এর চরিত্রে নজর কেড়েছেন ইন্দ্রনীল। ছবির 'উপাসক' পেশায় প্রত্নতত্ত্ববিদ, তবে তার মধ্যে রয়েছে রহস্য সমাধানের উৎসাহ। কিন্তু কেবল এই ছবি নয়, এর আগেও বাঙালি তাঁকে ‘ফেলুদা’ -এর ভূমিকাতে দেখেছেন। তবে বাস্তব জীবনে রহস্য তাঁকে কতটা আকর্ষণ করে? এই প্রসঙ্গে নায়ক বলেন, ‘হ্যাঁ আমিও রহস্য ভালোবাসি। রহস্য রোমাঞ্চের বই পড়া, সিনেমা দেখা এগুলো খুবই ভালো লাগে আমার। আর এর মধ্যে একটা মজার বিষয় হল, এগুলো পড়তে পড়তে বা দেখতে দেখতে নিজে নিজেও নানা রকমের অনুমান করা যায়। আমিও সেটা ভালোবাসি।’
আরও পড়ুন: ছাড়তে হবে মন্নত, ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে উঠছেন শাহরুখ! মাসে কত করে দিতে হবে কিং খানকে?
তবে ‘উপাসক’ এবং ‘ফেলুদা’ দু'জনই যেহেতু রহস্যের সন্ধানী তাই, দুটো চরিত্রকে আলাদা ভাবে উপস্থাপনা করার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন অভিনেতা? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আসলে চিত্রনাট্যের থেকে বড় প্রস্তুতি আর কিছু হতে পারে না। আর দুটো চরিত্র যেহেতু একদমই আলাদা ভাবে তৈরি, তাই সেটা আলাদা করার জন্য অন্যভাবে প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না।’
এই ছবির অনেকটা অংশ জুড়ে ইন্দ্রনীলের সঙ্গে ঋত্বিক চক্রবর্তীকে দেখা গিয়েছে। ঋত্বিকের সঙ্গে বহু বছর আগে কাজ করেছিলেন অভিনেতা। আবার এত বছর পর তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে ভীষণ খুশি নায়ক। অভিনেতার কথায়, ‘ওঁর সঙ্গে অনেকদিন পর কাজ করলাম। মানুষ হিসেবে ঋত্বিক ভীষণ ভালো। এই কাজটা করতে গিয়ে আমরা এক ঘরে থেকেছি, এক ভ্যানিটি ভ্যানও শেয়ার করেছি।’
আরও পড়ুন: গিটার বাজিয়ে গান ধরলেন শাহরুখের ছোট ছেলে আব্রাম! যদিও হিন্দি নয়, অন্য ভাষায়
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে আমার চোখে ঋত্বিক অন্যতম একজন সেরা অভিনেতা। আমার ওঁর অভিনয়ের ধরনটা খুব ভালো লাগে। ও খুবই আনপ্রেডিক্টেবল একজন অভিনেতা। ঋত্বিকের অভিনয়টা বেশ অগোছালো ধরনের, সেটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার খুব গোছানো অভিনয় ভালো লাগে না। কারণ ১০ জন অভিনেতার মধ্যে ৮ জনই সেটা করেন। আর ঋত্বিক সেটা করেন না বলেই এটা ওঁকে আলাদা করে। আমার সৌভাগ্য যে আমি ওঁর সঙ্গে কাজ করেছি।’
তবে এই ছবির পরিচালক রণ রাজ নতুন প্রজন্মের পরিচালক। নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে গেলে তো একটা ঝুঁকিও থাকে। তিনি কোন জায়গা থেকে এই কাজটি বেছে নিয়েছিলেন? প্রশ্নে ইন্দ্রনীলের সাফ জবাব, ‘হয়তো অনেক বড় মাপের সুপারস্টাররা পরিচালক বেছে কাজ করতে পারেন। কিন্তু আমাদের মতো যে সমস্ত অভিনেতারা রয়েছেন, তাঁরা পরিচালক বেছে কাজ করেন না। তাঁরা মূলত গল্প, চিত্রনাট্য বা চরিত্রের উপরই বেশি প্রাধান্য দেন। এই প্রসঙ্গে আমার একটা কথা বলতে পারি। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যে সমস্ত বড় মাপের পরিচালকরা রয়েছেন, মোটামুটি তাঁদের অনেকেরই প্রথম ছবিতে আমি কাজ করেছি। পরিচালক কত পুরস্কার পেয়েছেন, বা বক্সঅফিসে কেমন ফল করেছেন, তা দেখে আমি কোনও দিনই কাজ করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে রণ রাজ তাঁর গল্প নিয়ে এসেছিলেন, তিনি ওঁর ছবিতে আমাকে চেয়েছিলেন। আমার মনে হয়েছিল আমারও কাজটা করতে ভালো লাগবে। তাছাড়া ঋত্বিক চক্রবর্তী, জয় সেনগুপ্ত, দর্শনার মতো অভিনেতারা ছিলেন। অয়ন্তিকার সঙ্গে যদিও এই প্রথমবার কাজ করলাম। তবে বেশ ভালো লেগেছে কাজ করে। তাই সবটা মিলিয়ে আমার না বলার কোনও কারণ ছিল না। তবে পরিচালক আমাকে চাইছেন কিনা আমি সবার আগে সেটাই দেখি। অনেক সময় এটা হয় পারে যে, দশটা নতুন পরিচালকের ছবিতে কাজ করলে হয়তো ৩ টে ভীষণ জনপ্রিয় হল। পড়ে হয়তো সেই সব পরিচালকই প্রথম সারির পরিচালক হয়ে উঠলেন। কিন্তু এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে পরিচালকরা অনেক খ্যাতি পেয়ে গেলে তাঁরা ভীষণ বাছা শুরু করেন, সেটাই সমস্যার।’
কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত ভাবে এই ধরনের কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কি? প্রশ্নে নায়ক বলেন, ‘এটা বলব না যে তাঁদের থেকে আর কাজের সুযোগ আসেইনি, বা আমি এটাও বলব না যে আমাকে তাঁরা নিতে চান না। কিন্তু এমন বেশ কিছু পরিচালক রয়েছেন যাঁদের সঙ্গে আর পরে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। কেন হয়ে ওঠেনি সেটা আমি সত্যি বুঝতে পারি না। প্রথম ছবি নিয়ে অনেকেই ভয় পান যে, প্রথম ছবি না চললে ভবিষতে কী হবে? তিনি প্রথম ছবিতে যদি কোনও অভিনেতার উপর ঝুঁকি নিতে পারেন। আর তা চলে যায়, তারপর খ্যাতি পাওয়ার পর কি তাঁর ভরসাটা চলে যায়? নাকি সেই অভিনেতার উপরই তাঁর আরও ভরসা করা উচিত? আমি জানি না, বুঝি না এটা আমি।’
মুম্বইতে বর্তমানে বহু কাজ নিয়ে ব্যস্ত নায়ক। তবে সমান তালে বাংলাতেও কাজ করছেন। তিনি জানান, চলতি বছরের এপ্রিলেই মুক্তি পেতে পারে তাঁর আরও একটি ছবি 'পুরাতন'। সেই ছবিতে তাঁর সঙ্গে দেখা যাবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। তাছাড়াও এই ছবির সৌজন্যেই বহু বছর পর বাংলা সিনেমায় শর্মিলা ঠাকুরকে দেখা যাবে।