ফাইনালের ঠিক আগেই সারেগামাপা-থেকে বাদ যায় অঙ্কনা দে। ঘাটালের এই প্রতিযোগির গান প্রথম থেকেই মন ছুঁয়েছিল দর্শকদের। বিচারকরাও তার গানের যথেষ্ট প্রশংসা করতেন। কেবল গান নয় তার শিসের সুরেও মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছিল সে। শান্তনু মৈত্রর সূত্র ধরে তার এই অবাক করা প্রতিভা পৌঁছে গিয়েছিল শঙ্কর মহাদেবনের কাছেও। তা শুনে ছোট্ট অঙ্কনাকে প্রশংসায় ভরে দিয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। কিন্তু 'সারেগামাপা'-র ফাইনালে এই খুদে প্রতিযোগীর জায়গা না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেল নেটপাড়াকে। নিজের অনুরাগীদের আশ্বস্ত করতে এবার মেন্টর রথীজিৎ ভট্টাচার্য ও গৌরব সরকারের ছবি পোস্ট করে অঙ্কনা লিখল, 'কষ্ট পেলেও ভেঙে পড়িনি, উঠে দাঁড়িয়েছি।'
ফেসবুকে পোস্ট অঙ্কনার:
অঙ্কনার ফাইনালে না যেতে পারা নিয়ে সমাজমাধ্যমের পাতায় দর্শকদের যথেষ্ঠ ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। সোমবার অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে অঙ্কনা স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখে, ‘সুপ্রভাত সবাইকে। প্রথমেই সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।গত পরশু থেকে অনেকেই অনেক কষ্ট পেয়েছেন আমার জন্য। অনেক কিছু লিখেছেন।সবাইকে আলাদাভাবে রিপ্লাই দিতে না পারার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আমি ঠিক আছি। এই ছবি দুটো এই জন্যই দিলাম কারণ এঁরাই হলেন আমার সংগীত গুরু। যাঁদের কাছ থেকে শিখে আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছিলাম। আমি শুধুই গানই শিখি না, ওঁদের দেখে ভালো মানুষ হবারও চেষ্টা করি। কাজেই কষ্ট পেলেও ভেঙে পড়িনি। উঠে দাঁড়িয়েছি।’
'সা রে গা মা পা' -এ সুযোগ দেওয়ার জন্য চ্যানেল কৃতপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে সে লেখে, ‘আমি কৃতজ্ঞ জি বাংলার কাছে। এত মানুষ আমার গান শুনেছেন, আমাকে ভালোবেসেছেন, সবটাই চ্যানেলের জন্য। আমি সব ধরণের গান শোনানোর সুযোগ পেয়েছি আপনাদের। ওই গানগুলো আমার ওপর ভরসা করে ওঁরা দিয়েছিলেন বলেই আপনাদের শোনাতে পেরেছি। দীর্ঘ নয় মাসের জার্নি তার কাল সমাপ্তি হল। আজ থেকে আবার নতুন ভাবে সবকিছু শুরু। এভাবেই ভালোবেসে আমার পাশে থাকুন।’
তার এই পোস্ট প্রকাশ্যে আসতেই নানা কমেন্টে অনুরাগীরা তাকে ভরিয়ে দিয়েছে। একজন তো আবার অরিজিৎ সিংয়ের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন। ‘রিয়েলিটি শো থেকে বেরিয়ে গেলেও ট্যালেন্ট চলে যায় না… মুর্শিদাবাদের অরিজিৎ সিং.. ভারতের সবচেয়ে দামি গায়ক .. ইনি এই ব্যাপারে নজির হতে পারেন, গানের চর্চার মধ্যে থাকো, নিজেকে আরও প্রশিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা কর, একদিন সাফল্য আসবেই।’ আর একজন লেখেন, ‘অঙ্কনা একটা রত্ন, যেটা সঙ্গীতের সেরা মঞ্চ সঠিক ভাবে বুঝতে পারলো না।’
তবে এর আগে অঙ্কনা ফাইনালে না যাওয়া নিয়ে 'সা রে গা মা পা'-এর একটি পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দর্শকরা একজন লেখেন ‘সত্যি কথা বলতে সা রে গা মা পা দেখা ছেড়ে দিয়েছি। যারা ফাইনালে যাওয়ার যোগ্য তাদের বাদ দিয়ে যারা ফাইনাল যাওয়ার মতো না তাদের নিয়ে যায়। যারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্য তাদের চ্যাম্পিয়ন না করে যারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো না তাদের চ্যাম্পিয়ন করে। আগেরবার যেমন প্রত্যেকটা বাচ্চাদের ফাইনাল গান গাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল এবারও প্রত্যেকটা বাচ্চাকে ফাইনালে গান গাওয়ার সুযোগ দিতে পারত। একটা বাচ্চাকে নিয়ে যেতে পারতো না? অঙ্কনাকে কি বাদ দিতেই হত?’ আর একজন লেখেন, ‘ভুল সিদ্ধান্ত। অঙ্কনা কোনও কারণ ছাড়াই সেমিফাইনালে বাদ পড়েছে। ঐশী ভালো কিন্তু অঙ্কনার কিছু ভালো প্লাস পয়েন্ট আছে। এটা অন্যায়।’ আর একজন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, 'অঙ্কনা কেন বাদ হল?'
অনীকের ফেসবুক পোস্ট:
তাছাড়াও 'সারেগামাপা'-এর আর এক প্রতিভা অনীক জানা। তার গানে মুগ্ধ ছিলেন বিচারকেরা। তাকে ঘিরে 'সারেগামাপা'-এর মঞ্চে রীতিমতো বসত অনুরোধের আসর। সে তবে তারপরও বিজয়ীর মুকুট ওঠেনি তার মাথায়। তবে 'সঙ্গীতের সেরা মঞ্চ' তাকে নানা ভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এই মঞ্চে তার ৯ মাসের সফর নিয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করে খুদে সঙ্গীত শিল্পী লেখে, 'আমার নয় মাসের জি বাংলায় সঙ্গীতের জার্নি শেষ হল। KG -llতে পড়াশোনা করতে করতে আমি আমার মা বাবার হাত ধরে মে (২০২৪) মাসে পাঁশকুড়ায়তে অডিশন দিতে গিয়েছিলাম। জীবনে প্রথম অডিশনে পাস করে আমার সঙ্গীত সফর শুরু হয়। দীর্ঘ নয় মাসের জার্নি সমাপ্তি হল। আপনাদের মনোস্কামনা পূরণ করতে পারলাম না। আমি পারলাম না। এটাই আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। আমার মাথার ওপর আপনাদের আশীর্বাদ ছিল বলেই আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি। এর জন্য আপনাদের অশেষ অশেষ ধন্যবাদ। আপনারা আমার প্রণাম নেবেন। আমাকে আশীর্বাদ করুন। আমি যেন জীবনে অনেক বড় হতে পারি। আপনারা ভালো থাকবেন সুস্থ ও সুন্দর থাকবেন। (জীবন অতি সুন্দর)।
কী লিখল অতনু?
অন্যদিকে 'সারেগামাপা' বিজয়ী অতনু লেখে, ‘জি বাংলা 'সারেগামাপা’-এর জার্নি শেষ হল। দীর্ঘ নয় মাসের জার্নি. জি বাংলা ‘সারেগামাপা’-এর যাঁরা ব্যাকবোন ছিলেন বিশেষ করে অভিজিৎ স্যার (পরিচালক) ও যাঁদের ছাড়া এই শো টা হত না তাঁরা হলেন এই মানুষ জন। আমি অনেক ধন্যবাদ জানাই এই দীর্ঘ সময় আমাকে ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখার জন্য। আমি প্রচুর দুষ্টুমি করেছি, তার জন্য বকুনিও খেয়েছি। তবে বকুনির থেকে অনেক বেশি ভালোবাসাও পেয়েছি সবার থেকে। তাই সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও প্রণাম জানাই। এভাবেই সারাজীবন আপনাদের ভালোবাসা ও আশীর্বাদের হাত যেন আমার মাথায় থাকে।’
প্রসঙ্গত, রবিবার ২ মার্চ রাতে শেষ হয়েছে সারেগামাপা-র লম্বা সফর। ছোটদের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে অতনু মিশ্রকে। আর বড়দের মধ্যে থেকে বিজেতা দেয়াশিনী রায়। এছাড়াও কালিকাপ্রসাদ সম্মান পেয়েছেন আরাত্রিকা। বড়দের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে যুগ্ম ভাবে জয়ী সাঁই ও ময়ূরী।