২৮ এপ্রিল, সোমবার সকাল ১০টা। ঘুম থেকে উঠে বৈভব তাঁর প্রথম ফোনটা করেন শৈশবের কোচ মণীশ ওঝাকে। কিছুটা টেকনিক আর ফুটওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর বৈভব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘স্যার, আজ মারব।’
বৈভব সূর্যবংশীর কোচ বুঝেছিলেন RR vs GT ম্যাচে বড় একটা কিছু হতে চলেছে (ছবি- AFP)
‘এটা কি কখনও হয়েছে? আপনি কি প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছেন?’ – ঠিক এই নিরীহ কিন্তু প্রভাবশালী প্রশ্নটাই নিজের আইপিএল অভিষেকের কদিন আগে এক সতীর্থকে করেছিলেন কিশোর বৈভব সূর্যবংশী। ভাবা যায়? মাত্র ১৪ বছরের এক তরুণ এমন প্রশ্ন করেছিল! হয়তো ওর মনে কী চলছিল, তার একটা আভাস ছিল এটাই।
সেই ম্যাচটি ছিল লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে। ভারতের অন্যতম সেরা পেসার আবেশ খানের হাতে ছিল বল। যশস্বী জসওয়াল প্রথম বলেই সিঙ্গল নিয়ে স্ট্রাইক ছেড়ে দেন বৈভবকে। এরপর যা ঘটল, তা যেন এক রূপকথা—বৈভব সূর্যবংশী তাঁর আইপিএল কেরিয়ারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে ঘোষণা করলেন নিজের আগমন।
এই ঘটনা কি ও আগে থেকেই অনুভব করেছিল? হতে পারে। এটা কি নিছক কাকতালীয় ছিল? সম্ভব। কিন্তু চলুন, আরও একটা বিশেষ মুহূর্তে যাই। ২৮ এপ্রিল, সোমবার সকাল ১০টা। ঘুম থেকে উঠে বৈভব তাঁর প্রথম ফোনটা করেন শৈশবের কোচ মণীশ ওঝাকে। কিছুটা টেকনিক আর ফুটওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর বৈভব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘স্যার, আজ মারব।’
ওঝা বলেন, ‘মারো ঠিক আছে, কিন্তু উইকেট দিয়ে এসো না। ঠান্ডা মাথায় খেলো, যশস্বীর সঙ্গে কথা বলতেই থাকো।’ সন্ধ্যায়, বৈভব প্যাড পরে ডাগআউট থেকে বেরিয়ে যশস্বীর সঙ্গে মাঠে নামেন। এবং তারপরের গল্প তো ইতিহাস।
১৪ বছর বয়সেই ইতিহাসের পাতায় বৈভব সূর্যবংশী
বিহারের সমষ্টিপুর জেলার কিশোর প্রতিভা বৈভব সূর্যবংশী গড়লেন এক অবিশ্বাস্য রেকর্ড। মাত্র ৩৮ বলে ১০১ রান করে আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে শতরান করার নজির গড়লেন তিনি। বয়স তখন মাত্র ১৪ বছর ৩২ দিন।
জয়পুরের সওয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামে গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে এই ইনিংসে তিনি হাঁকালেন ১১টি ছক্কা ও ৭টি চার, আর এই ইনিংসে কার্যত ধ্বংস করে দিলেন একঝাঁক আন্তর্জাতিক তারকা বোলারদের—ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ সিরাজ, প্রসিধ কৃষ্ণা, ওয়াশিংটন সুন্দর, রশিদ খান ও করিম জানাত।
প্রচণ্ড গর্জনে গমগম করছিল গ্যালারি, কিন্তু বৈভব ছিলেন অটল—বিশ্বমানের বোলারদের যেন খেলনা বানিয়ে দিলেন। মাত্র ৩৫ বলে শতরান করে ফেলেন, যা দেখে ঘটে এক আবেগঘন মুহূর্ত—আহত রাহুল দ্রাবিড়, যিনি হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় পুরো টুর্নামেন্ট কাটাচ্ছিলেন, তিনি দাঁড়িয়ে হাত তুললেন আনন্দে, খুশিতে চিৎকার করে উঠলেন—একজন কিংবদন্তি নিজের চোখের সামনে জন্ম নিতে দেখলেন আরেক সম্ভাব্য কিংবদন্তিকে।
কোচ মণীশ ওঝা বলেন, ‘ও বলেছিল যে মারবে। কিন্তু আমি ভাবিনি ও এভাবে মারবে! আমার একটা অন্তর্জ্ঞান ছিল, কিছু একটা বড় হবে, কিন্তু এতটা বড় হবে বুঝিনি। ও ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভাধর। ও এখনো একটা বাচ্চা—মাত্র ১৪ বছর বয়স। ঈশ্বর ওকে অপার প্রতিভা দিয়েছেন। আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ যে ওর কেরিয়ারে আমি সামান্য হলেও ভূমিকা রাখতে পেরেছি।’
ওঝা আরও বলেন, ‘ও সবসময় বলে যে রাজস্থান রয়্যালস ওকে একটা বিশাল মঞ্চ দিয়েছে। ও পরিশ্রম করতে চায়, ভালো খেলতে চায়, নিজের সেরাটা দিতে চায়। ওর চূড়ান্ত স্বপ্ন হল ভারতের হয়ে খেলা। ও এখনও মাত্র ১৪। সচিন তেন্ডুলকর ১৬ বছর বয়সে ওয়ানডে অভিষেক করেছিলেন। আমি নিশ্চিত, বৈভব সঠিক পথে রয়েছে। রাহুল দ্রাবিড়ের মতো কিংবদন্তি যখন পাশে আছেন, ওর আর কিছু নিয়ে ভাবনা নেই।’