যখন ১৭ বছর বয়সি ব্যাটার আয়ুষ মাত্রে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI) বিরুদ্ধে চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK) জার্সি গায়ে আইপিএল ২০২৫ ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন, তখন কৌতূহলের ঢেউ বয়ে যায়। অভিজ্ঞতাপূর্ণ খেলোয়াড়দের প্রতি সিএসকের ঝোঁকের কথা মাথায় রেখে, এত কম বয়সে দলের প্রতিনিধিত্ব করায় এই তরুণ ব্যাটারের প্রতি সকলের নজর পড়ে।
‘ওকে নিয়ে এত বারাবারি করার কারণ কী?’ এমন প্রশ্ন ঘুরচ্ছে ভক্তদের মধ্যে। মুম্বই ক্রিকেট সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা হয়তো আয়ুষ মাত্রের প্রতিভা সম্পর্কে জানতেন। তবে আয়ুষ নিজেই তাঁর ব্যাটে সেই উত্তরের স্বাক্ষর রাখেন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। ১৫ বলে ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে হোম ফ্যানদের চমকে দেন আয়ুষ মাত্রে। একটাও বল তাঁর নাগালের বাইরে মনে হয়নি, যেন নিজের আদর্শ রোহিত শর্মার সামনেই মজা করে রান তুলছিলেন আয়ুষ মাত্রে।
রোহিত শর্মা ও শার্দুল ঠাকুরের শৈশবের কোচ এবং বর্তমান মুম্বই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ দীনেশ লাড বলেন, ‘সে খুব আত্মবিশ্বাসী, রোহিতের মতোই, এবং ইতিবাচক— যা তার ইনিংসে স্পষ্ট ছিল। রোহিত যখন ১৫ বছর বয়সে খেলত, তখনও এমনই ছিল। আয়ুষের মধ্যেও আমি সেই মিলটা দেখেছি।’
তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘আমরা যখন প্রথম দেখা করি, তখন সে ১০ বছরের। তখনই বুঝে গেছিলাম তার স্ট্রোক প্লে খুব স্বাভাবিক এবং মসৃণ। নালাসোপারা থেকে আসতেও দেরি করত না, খুব সময়নিষ্ঠ ছিল। রান করার ক্ষুধা তার অন্যতম শক্তি, যা তাকে দ্রুত এগিয়ে দিয়েছে।’
সিএসকে ব্যাটারের যাত্রা বাইরে থেকে রূপকথার মতো শোনালেও, বাস্তবে তা ছিল কঠিন সংগ্রামের গল্প। তাঁর কোচ প্রশান্ত শেঠি জানিয়েছেন, একসময় মানসিক অবসাদ ও ফিটনেস সমস্যার মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে আয়ুষকে। তবে সব সময় পাশে ছিলেন তার বাবা যোগেশ মাত্রে।
কোচ প্রশান্ত শেঠি বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আয়ুষ। তার বাবা যোগেশ প্রতিটি ম্যাচে সঙ্গ দিতেন, যদিও তিনি একজন ব্যাঙ্কার ছিলেন। ভারি কিট ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা যাত্রা করে মুম্বইতে ম্যাচ খেলতে যাওয়া খুব কঠিন। কিন্তু যোগেশ স্যার সবসময় ইতিবাচক থেকেছেন। এক বছর আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন শুধুমাত্র ছেলের জন্য সময় দিতে।’
আরও পড়ুন … কেন KKR vs GT ম্যাচে ইডেনে উপস্থিত ছিলেন না হর্ষ ভোগলে? নিজেই জানালেন আসল কারণ
আয়ুষের প্রথম লক্ষ্য ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করা। কিন্তু গত বছর টপ-৩০ এনসিএ খেলোয়াড়দের মধ্যে জায়গা না পাওয়ায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। প্রশান্ত শেঠি বলেন, ‘তখন আমরা তার টেকনিক নিয়ে কাজ শুরু করি, এবং লক্ষ্য ঠিক করি। ভিনু মানকড় ট্রফিতে ৩০০ রান করতে হবে। আয়ুষ প্রতিদিন দুইবার প্র্যাকটিস করত এবং শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যাচ খেলত। সেই সময় থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। KACA টুর্নামেন্টে ডাক পেয়ে প্রথম ম্যাচে ৫১ করলেও বলেছিল, শতরান করা উচিত ছিল। তখনই বুঝেছিলাম, মানসিকভাবে অনেক পরিণত হয়েছে।’
আরও পড়ুন … একানা স্টেডিয়ামে ফিরে আবেগে ভাসলেন লখনউয়ের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন! LSG vs DC ম্যাচে নজরে কেএল রাহুল
KACA-তে ভালো খেলার ফলেই আয়ুষ জায়গা করে নেয় ইরানি ট্রফি, রঞ্জি ট্রফি, ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দল, বিজয় হজারে ট্রফি ও এখন আইপিএলে। আয়ুষ মাত্রের কোচ প্রশান্ত শেঠি বলেন, ‘১৭ বছর বয়সে এতগুলো টুর্নামেন্ট খেলা আমি আগে দেখিনি।’ শারীরিকভাবে নিজেকে গড়ার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হয়েছিল তাঁকে। প্রশান্ত বলেন, ‘আমি তাকে স্পষ্টভাবে বলেছিলাম, যদি ভারত দলে খেলতে চাও, তাহলে ডায়েট ঠিক করতেই হবে। ২০১৯/২০ সালের তুলনায় ওর ফিটনেস এখন অনেক উন্নত। আমরা সৈকতে দৌড় ও ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করতাম। সে অলরাউন্ডার হতে চায়, আর সফল হতে গেলে ত্যাগ করতেই হয়।’
আরও পড়ুন … পার্টি, বান্ধবী সবকিছু বন্ধ করতে যুবি ওকে তালা দিয়ে রেখেছিল! জানেন কীভাবে অভিষেককে খুঁজে পেয়েছিলেন যুবরাজ?