সুনীল নারিনের মতো স্পিন বোলিং আর ‘নোটবুক সেলিব্রেশন’-এর বাইরে দিগ্বেশ রাঠি-কে জানার মতো আরও অনেক কিছু রয়েছে। আইপিএল ২০২৫-এর এই ‘ব্রেকআউট’ স্পিনার, যিনি এখন লখনউ সুপার জায়ান্টস অধিনায়ক ঋষভ পন্তের ভরসার বোলার, তাঁর জীবনের পথচলা যেন কোনও সিনেমার গল্পের মতো। ছোটবেলা থেকেই দিগ্বেশ ও তাঁর পরিবার প্রতিকূলতা আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। তবে সব বাধা টপকে যে জায়গায় দিগ্বেশ রাঠি পৌঁছেছেন, তা এক কথায় অনন্য।
পরিবার দিগ্বেশ রাঠিকে ‘ববি’ নামে ডাকেন। তাঁর বাবা ধর্মেন্দ্র, বড় ছেলে ‘সানি’র পর ছোট ছেলেকে ‘ববি’ নাম দেন, যেন পুরো ব্যাপারটাই কোনও বলিউড সিনেমার ছায়া।
ছোটবেলায় দিগ্বেশের পরিবারকে দিল্লি ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়কার কথা শেয়ার করেছেন তাঁর বড় ভাই সানি, যিনি নিজে একজন প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনার ছিলেন, কিন্তু পরিবারকে সাহায্য করার জন্য নিজের ক্রিকেট স্বপ্ন ত্যাগ করেন তিনি। বর্তমানে মন্ডোলি কারাগারে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত সানি বলেন, ‘দিগ্বেশের কোনও গডফাদার ছিল না, আমাদের কাছে টাকা বা পরিচিতি কিছুই ছিল না। সকলেই বলেছিল দিল্লি ছেড়ে দাও। কিন্তু আমরা ভাবলাম, কেন পালিয়ে যাব?’
আরও পড়ুন … কোচের সঙ্গে ঝামেলা! Super Cup 2025-এর আগেই ক্লেটনকে লাল কার্ড দেখাল ইস্টবেঙ্গল
এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেই বেড়ে ওঠে ‘ববি’। আর এখন সে লখনউ সুপার জায়ান্টস-এর হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেছেন। ৩০ লক্ষ টাকায় কেনা দিগ্বেশ নিজের চতুর্থ আইপিএল ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ১/২১ বোলিং করে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ জেতেন।
সানি জানান, কীভাবে দিগ্বেশ দিনের পর দিন প্র্যাকটিস করেছে পূর্বি দিল্লির খেল পারিসারে। একটা সময় সে বীরেন্দ্র সেহওয়াগের মতো কাভার ড্রাইভ মারত, পরে যখন দেখল তাকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ কম দেওয়া হয়, তখন বেছে নেয় সুনীল নারিনের মতো বোলিং অ্যাকশন এবং নিজেকে গড়ে তোলে স্পিনার হিসেবে।
আরও পড়ুন … কবে অবসর নেবেন রোহিত শর্মা? হিটম্যানকে মুখের উপর জবাব দিলেন মাইকেল ক্লার্ক
সানি বলেন, ‘ও যখন ব্যাট করতে আসত, অনেক নামী বোলার বল করতে চাইত না। পরিচিত না হওয়ায় ওকে পাত্তা দেওয়া হত না। যারা নিজেদের বল নিয়ে আসত, তারা বল নষ্ট হবে ভেবে ওকে বল করতে চাইত না। আমি নিজে ওকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল করতাম।’
তবে শুধু ইচ্ছা নয়, কঠোর পরিশ্রমও ছিল। ভাই সানিকে উইকেটকিপারের ভূমিকা নিতে হয়েছে যাতে দিগ্বেশ ঠিকঠাক প্র্যাকটিস করতে পারে। এর পর ধীরে ধীরে ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। একসময় প্রাক্তন ভারতীয় কিপারব্যাটার বিজয় দাহিয়া তাঁর প্রতিভা দেখে ডেকে নেন নিজের অ্যাকাডেমিতে।
আরও পড়ুন … কেন আম্পায়াররা IPL 2025-এ ব্যাটের পরীক্ষা করছেন? এই পদক্ষেপ নিয়ে মুখ খুলল BCCI
এরপর দিল্লি প্রিমিয়ার লিগ-এ সাউথ দিল্লি সুপারস্টারজ-এর হয়ে ১৪ উইকেট তুলে নেওয়ার পর তাঁর নাম চলে আসে IPL-এর রাডারে। LSG টিম ম্যানেজমেন্টকে দাহিয়া সরাসরি দিগ্বেশ রাঠির নাম সুপারিশ করে থাকেন।
এখন পর্যন্ত ৭টি ম্যাচে ৯টি উইকেট তুলে নিয়েছেন দিগ্বেশ রাঠি। এবং তাঁর ইকোনমি রেট ৭.৪৩। যা টি-টোয়েন্টির জন্য বেশ ভালো। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা এক স্পিনারের এই জার্নি নিঃসন্দেহে অনেক তরুণ ক্রিকেটারের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে।