বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার টেস্ট থেকে অবসরের পর ভারতের ক্রিকেট-গঠনে এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন হেড কোচ গৌতম গম্ভীর। এখন সময় তরুণ প্রতিভাদের উপর আস্থা রাখার ও তার পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করার। একমাত্র স্থায়ী জিনিস এখন পরিবর্তন।
টিম ইন্ডিয়ার সমস্ত কন্ট্রোল কি এখন গম্ভীরের হাতে? (ছবি : PTI)
বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার টেস্ট থেকে অবসরের পর ভারতের ক্রিকেট-গঠনে এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন হেড কোচ গৌতম গম্ভীর। এখন সময় তরুণ প্রতিভাদের উপর আস্থা রাখার ও তার পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করার। একমাত্র স্থায়ী জিনিস এখন পরিবর্তন।
ভারতের টেস্ট দল গত কয়েক বছর ধরেই প্রজন্মগত পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছিল। যখন চেতেশ্বর পূজারা এবং অজিঙ্কা রাহানে দল থেকে বাদ পড়লেন, তখন থেকেই বদলের গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। গত বছর গম্ভীরকে হেড কোচ হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সেই প্রেক্ষিতে, কোহলি এবং রোহিতের বিদায়কে এই পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। একটি নতুন টেস্ট ইউনিট গড়ে তোলার রূপরেখা অনুযায়ী।
এখন কেবল একটিই রাস্তা খোলা তরুণ প্রতিভাদের উপরে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করা, যারা ভবিষ্যতে ভারতের টেস্ট দলের মেরুদণ্ড গড়ে তুলবে। এর সুফল মিলবে সময় নিয়ে। এমন পরিবর্তন ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য নতুন নয়। ২০১৩ সালে সচিন তেন্ডুলকর অবসর নেওয়ার সময়, রাহুল দ্রাবিড় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ ঠিক এক বছরের মধ্যেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনও একই ধরনের দুশ্চিন্তা ছিল। তারপর ভারতের দল তিন বছর ধরে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে, অবশেষে কোহলির নেতৃত্বে আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক সাবা করিম বলেন, ‘তখন আমাদের অধিনায়ক ছিলেন এমএস ধোনি। তিনি জানতেন কোন পথে দলকে নিয়ে যেতে হবে এবং কারা তার জন্য উপযুক্ত। গৌতম গম্ভীর ও বীরেন্দ্র সেহওয়াগের পরবর্তী যুগে এগোতে হবে — এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোহলি, পূজারা এবং রাহানে ইতিমধ্যেই দলের চারপাশে ছিল এবং ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের পারফরম্যান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দল তখন জিতছিল না, কিন্তু ঠিক পথে হাঁটছিল। কোহলি যখন চার নম্বরে ব্যাটিং করা শুরু করল, তখন বোঝা গিয়েছিল ও ভবিষ্যতের মূল ব্যাটিং স্তম্ভ হয়ে উঠবে।’
এই মুহূর্তে ভারতের দলে তেমন কোনও সুস্পষ্ট নেতা নেই। কোচ গম্ভীর দায়িত্ব পেয়েছেন তাড়াতাড়ি পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে, এবং এখন সময় এসেছে সেসব পরিকল্পনা কার্যকর করার। সাবা করিম বলেন, ‘গম্ভীর এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাকে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস দিতে হবে, নতুন অধিনায়ককে বুঝতে হবে, এবং সেই অধিনায়কের ক্রিকেটের দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
২০১৭ সালে যখন অনিল কুম্বলে কোচ ছিলেন, তখনও তিনি শক্তিশালী ছিলেন — কিন্তু অধিনায়ক কোহলির কথাই শেষ কথা ছিল। এইবার গম্ভীরের হাতে আছে পূর্ণ ক্ষমতা, তবে তাকে সাবধানে হাঁটতে হবে। প্রাক্তন নির্বাচক দেবাং গান্ধী বলেন, ‘গম্ভীর জানে সে কোন ধরণের ক্রিকেট খেলাতে চায়। তবে সে যদি খেলোয়াড়দের ক্ষমতায়ন করে এবং দলে নেতৃত্ব সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করে, তবে সে সফল হবে। আমি নিশ্চিত সে ঋষভ পন্তের মতো খেলোয়াড়কে পাশে দাঁড় করাবে, বিশেষ করে ইংল্যান্ড সফরের মতো কঠিন সময়ে।’
শুধু কোহলি আর রোহিতের জায়গা পূরণ করাই নয় — ভারতের অতীতে যে দুর্দান্ত পেস আক্রমণ ছিল, তা এখন ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে আসছে। ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব — এই পেসাররা দীর্ঘদিন দলে ধারাবাহিকতা এনেছিলেন।
সাবা করিম বলেন, ‘এই পেসারদের আগেই চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রস্তুত করা হয়েছিল। শুরুতে তারা বিদেশে সফল হতে পারেনি। কিন্তু একবার কোহলি সিদ্ধান্ত নিল যে সে পাঁচ বোলার খেলাবে, তখন থেকেই চিত্রটা বদলে যায়। একইভাবে, যদি আপনি হর্ষিত রানা, প্রসিধ কৃষ্ণ, আকাশ দীপ ও আর্শদীপ সিং-কে ভবিষ্যতের জন্য ভাবেন, তাহলে তাদের নিয়েই কাজ করতে হবে।’
দেবাং গান্ধী মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, কীভাবে ২০২০ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে 'এ' টিম প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা আটটি 'এ' সফরে গিয়েছিলাম এবং দ্রাবিড়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ব্যাকআপ তৈরি করেছি। সিরাজ, শার্দুল, নবদীপ সাইনি প্রস্তুত ছিল। এখন রেড বল 'এ' সফরে আরও মনোযোগ দিতে হবে। সাদা বলের দল নিজেই তৈরি হয়ে যাবে আইপিএল-এর কারণে।’