দু’দিন কেটে গিয়েছে। মেয়ের দেহ পাশে নিয়েই বসবাস করছিলেন মা। বুঝতে পারেননি তাঁর মেয়ে আর বেঁচে নেই। এভাবেই কাটছিল দিন। এরপর বিষয়টি প্রকাশ্যে এল। তখনও নিস্তেজ মা। কিছুই বুঝতে পারছেন না সবাই কি বলছে! কারণ ওই মহিলা বোঝার মতো মানসিক অবস্থাতেই নেই। তাই মেয়ের মৃতদেহের সঙ্গে কাটাচ্ছিলেন দিন–রাত। অবশেষে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছে পুলিশ। খাস কলকাতার বিজয়গড়ে এবার দেখা গেল রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক আলোড়ন দেখা দিয়েছে।
ঠিক কী ঘটেছে বিজয়গড়ে? স্থানীয় সূত্রে খবর, মা এবং মেয়ে দু’জনেই মানসিক ভারসাম্যহীন। এই অবস্থায় তাঁরা বাড়িতে বসবাস করতেন। যাদবপুর থানা এলাকার বিজয়গড়ে বসবাস ছিল বসু পরিবারের। তাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। তাঁরা বাড়ি থেকে বেরতেন না। সেখানে কেউ একজন এসে খাবার দিয়ে যেত। এই মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেটাও মা জানতেন না। আর সেই অসুস্থতা থেকেই মৃত্যু হয়েছে মেয়ের। বাড়ির ভিতর থেকে একটা পচা গন্ধ আসতেই গোটা বিষয়টি সামনে আসে। আর পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ কী তথ্য পেয়েছে? পুলিশ সূত্রে খবর, মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে মা বসবাস করছেন এই খবর পেয়ে বিজয়গড়ের বাড়িতে যাওয়া হয়। সেখানে দরজা ভেঙে ঢুকতে হয়। মৃতার নাম সুচরিতা বসু (৩৮)। মা–মেয়ে দু’জনেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। আজ, সোমবার দুপুরে উদ্ধার হয় সুচরিতার মৃতদেহ। মেয়ের মরদেহের সঙ্গেই দিন কাটাচ্ছিলেন মা দিপালী বসু (৬৮)। তাঁদের আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। তাই তাঁদের এক আত্মীয় রোজ দু’বেলা অ্যাপ নির্ভর খাদ্য সরবরাহ থেকে খাবার পাঠাতেন। সেই খাবার খেয়েই তাঁরা বেঁচে ছিলেন। কারণ তাঁদের কোনও আয় ছিল না। মেয়ের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।
কেমন করে প্রকাশ্যে এল ঘটনা? রোজকার মতো আজও বিজয়গড়ের বাড়িতে খাবার খাবার দিতে আসে এক ডেলিভারি বয়। তখনই সে দুর্গন্ধ পায়। এই দুর্গন্ধ পেয়ে তাঁর সন্দেহ হয় এবং অন্যান্য প্রতিবেশীদের তিনি জানান। তখন প্রতিবেশীরা এই খবর দেন যাদবপুর থানায়। সেখান থেকে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঢোকে। কারণ কেউ দরজা খুলছিলেন না। দরজা ভাঙতেই মেয়ের মৃতদেহ আগলে মা বসে আছে দেখতে পায় পুলিশ। পচন দেখা পুলিশের অনুমান, দু’দিন আগেই মেয়েটি মারা গিয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীন মা মেয়ের মৃত্যু বুঝতেই পারেননি। পুলিশ ওই মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে বলে খবর।