শনিবার রাতে কলকাতার ইএম বাইপাসের ঘটনা। ঘড়িতে তখন রাত ১১টা ৫০। স্বামী দীপ সতপথির সঙ্গে গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিলেন দক্ষিণ কলকাতার আনন্দপুরের বাসিন্দা নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। হঠাৎ তাঁদের পেছনে থাকা চলন্ত এক গাড়ি থেকে ভেসে আসে যুবতীর আর্তনাদ। দেখা যায়, পেছনের হন্ডা সিটি গাড়ির চালকের পাশে বসা যুবতী চিৎকার করে চলেছেন। দীপ তাঁদের গাড়ি মাঝ রাস্তায় থামিয়ে ওই গাড়িটির পথ আটকান।দীপ বলছিলেন, ‘এর পর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে আমার স্ত্রী পেছনের হন্ডা সিটি গাড়িটির দিকে যান। সেই সময় চলন্ত গাড়ি থেকে ওই যুবতীকে ছুড়ে ফেলা হয়। এর পরই আমার স্ত্রীকে ধাক্কা মারে গাড়িটি। গাড়ির চাকা তাঁর পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। পায়ের হাড় ভেঙেছে তাঁর।’ জখম ওই মহিলার স্বামী আরও বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ফোন করি। দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় পুলিশ। নীলাঞ্জনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার করা হবে।’গাড়ির চালক অভিযুক্ত অমিতাভ বসুর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে আনন্দপুর থানার পুলিশ। যদিও সেটিই ওই অভিযুক্ত যুবকের আসল নাম কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুলিশের। ওই যুবকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন নিপীড়ত ওই যুবতী। এদিকে, পুলিশ এদিন এক ব্যক্তিকে আটক করলেও পরে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গাড়ির নম্বর যুবতীর জানা না থাকায় সিসি টিভি ফুটেজ দেখে গাড়ির খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। ওই যুবতী অভিযোগে জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই অমিতাভর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হয় তাঁর। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি অমিতাভর সঙ্গে বের হন। অভিযোগ, চলন্ত গাড়ির মধ্যে তাঁর সঙ্গে অসভ্যতা করতে শুরু করে অমিতাভ। এর পর ধস্তাধস্তির সময় ওই যুবতীর পোশাকও ছিড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করলে সে কথায় কর্ণপাত করেনি ওই যুবক। তার পরই ওই দম্পতি উদ্ধার করে ওই যুবতীকে।এদিনের এই ঘটনায় কলকাতা শহর জুড়ে তুমুল আলোড়ন তৈরি করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে বিশিষ্ট নাগরিকরাও সরব হয়েছেন। নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার বলেন, ‘এই ঘটনা যেমন একদিকে রাতের কলকাতায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তেমনই এটাও বুঝিয়ে দিল যে সব কিছুর বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়ানো যায়। আমি এই সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানাই।’