আসলে ওদের জীবনটা ঠিক আর পাঁচজনের মতো নয়। অনেকের বাড়িতেই মাধ্যমিকের পড়ুয়া থাকলে বাবা-মা, অভিভাবকরা একেবারে রাত দিন তার পড়াশোনা কতটা হল তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন। তবে প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিক আর সোনিয়া ঘোষ দুজনেই ফুটপাতবাসী। তাদের মাধ্য়মিকের জার্নিটা একেবারেই অন্য়রকম।
ফুটপাতেই তাদের ঘর সংসার। নিত্য়দিন নানা সমস্যা। স্টাডি রুম বলে আলাদা কিছুর কথা ভাবতেই পারে না সোনিয়া, প্রিয়াঙ্কারা। ফুটপাতের জীবন। ফুটপাতে কাটে রাত। স্ট্রিট লাইটের নীচে পড়াশোনা। চারদিকে গাড়ির হর্নের শব্দ। তার মাঝেই চলে পড়াশোনা।
এবারের মাধ্যমিকে প্রিয়াঙ্কা পেয়েছে ২১২ আর সোনিয়া পেয়েছে ১৯৫। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে।
স্কুলে তাদের নাম লেখানো ছিল। কিন্তু সেই স্কুলে ক্লাস করতে যেতে পারেনি তারা। কিন্তু মাধ্যমিকটা কোনওরকমে দিয়েছে তারা।
প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছে, একটা স্কুলে নাম লেখানো ছিল। কিন্তু কখনও সেখানে যাইনি। আমি হোটেলে বাসন মাজি। টালিগঞ্জ রেল ব্রিজের নীচেই থাকে প্রিয়াঙ্কা। বাড়ি বলতে ফুটপাত। ফুটপাতেই বেড়ে ওঠা।
ছবি আঁকতে ভালোবাসে প্রিয়াঙ্কা। সে জানিয়েছে বাবা রোজ অত্যাচার করে। তার মধ্য়ে থেকে কোনও দিন ভাবিনি যে পড়ার সুযোগ পাব।
ফুটপাতে বসে বসে সোনিয়া দেখত তার বয়সি মেয়েরা কেমন স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু স্কুলে যেতে পারত না সোনিয়া। খুব কষ্ট হত তার। কিন্তু কিছু তো করার নেই।
সাউদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কাছে একটা সুলভ শৌচাগারের কাছের ফুটপাতে থাকে সোনিয়া। বয়স ১৭ বছর। ওই প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, সারা দিন ঘুরে বেড়াই এদিক-ওদিক। আগামী দিন ট্যাটু আর্টিস্ট হতে চায় সে।
আসলে ২০১৯ সাল থেকেই তাদের জীবনের গতি কিছুটা বদলাতে শুরু করে। সেই সময় মিত্রবিন্দু ঘোষ নামে এক সমাজসেবী তাঁদের কাছে এসেছিলেন।তিনিই ওই ফুটপাত কন্য়াদের পড়াতে শুরু করেন। তাঁদের খাবারদাবারও তিনি দিতেন। এরপর ধাপে ধাপে তারা পড়াশোনা করতে শুরু করে।
মিত্রবিন্দু ঘোষ তাঁদের জন্য় অনেক কিছু করেছেন। অঙ্ক শিখিয়েছেন। কীভাবে লিখতে হয় শিখিয়েছেন।
এদিকে পরীক্ষার কিছু দিন আগে তাদের ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। প্রিয়াঙ্কা বলে, সেই সময় একটা জায়গা খুঁজতাম যেখানে পড়তে পারব। ভাঙা একটা ভ্য়ানের ওপর বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি।
তবে তাদের এই সাফল্য দারিদ্রে ভরা কলকাতার ফুটপাতবাসীদের কাছে এক চিলতে রোদ্দুর। অঝোর বর্ষার পরে তারাই তো রামধনূ।