হালিম রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে সেটিকে জনস্বার্থ মামলা হিসেবে বিবেচনা না করার আর্জি জানান রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত। যদিও তাঁর আর্জি খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
কলকাতা হাইকোর্ট (ছবি সৌজন্য হিন্দুস্তান টাইমস)
রাজ্য সরকার কীভাবে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করছে, তা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করবে কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি, করোনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্যকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
বর্ষীয়ান সিপিআইএম নেতা ফুয়াদ হালিমের দায়ের করা মামলার শুনানিতে শুক্রবার দীর্ঘ রায় দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। করোনা মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, কীভাবে মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করা হচ্ছে, সংক্রমণ রুখতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে - সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজ্যকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) নিয়ম মেনে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষিত রাখা হচ্ছে, তা নিয়েও রাজ্যকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
জনস্বার্থ মামলাটি এপ্রিলের গোড়ার দিকে করেছিলেন বর্ষীয়ান সিপিআইএম নেতা ফুয়াদ হালিম। হালিম রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে সেটিকে জনস্বার্থ মামলা হিসেবে বিবেচনা না করার আর্জি জানান রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত। যদিও তাঁর আর্জি খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সওয়াল করেন, হু এবং আইসিএমআরের নিয়ম মানছে না রাজ্য। যেভাবে মৃত্যুর কারণ অডিট করা হচ্ছে ও ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, 'এই বিষয়ে আমরা এখন কিছু বলব না। মৃত্যুর কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন সম্ভাবনা এবং কোনও নির্দিষ্ট মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আমরা অবহিত। তবে আমাদের আশা, স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতামত-সহ এই বিষয়ে রাজ্য সরকার নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।'
রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব সৌমিত্র মোহনের দেওয়া কিছু রিপোর্ট হাইকোর্টের সামনে তুলে ধরেন তিনি। তা নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, হাইকোর্টের পরবর্তী রায়ের জন্য অপেক্ষা না করে হলফনামার আকারে প্রয়োজনীয়-প্রাসঙ্গিক রিপোর্ট ও নথি দেবে রাজ্য।
সরকারের তরফে রিপোর্টে জানানো হয়, গত ১৩ এপ্রিল একটি অ্যাডভাইজারি জারি করা হয়েছিল। সেখানে সমস্ত স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে আইসিএমআরের সাম্প্রতিক নিয়মানুসারে পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা কোনও ব্যক্তি উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, তাঁদের পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে মামলাকারীর আইনজীবী জানান, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা নেই এবং তাঁদের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও খামতি রয়েছে। সেই প্রসঙ্গে হাইকোর্ট রায় দেয়, 'এই উদ্বেগের জবাব দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এই বিষয়ে রাজ্য সরকার রিপোর্ট দেবে বলে আশা করছি। আমরা জানি যে এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কর্তৃপক্ষ হল হু এবং আইসিএমআর। রাজ্য প্রশাসন-সহ সবাইকে তাঁদের নির্দেশিকা ও অ্য়াডভাইজারি মেনে চলতে হবে। আমরা নিশ্চিত তা করা হবে। '
পাশাপাশি, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিষয়ে হালিমের আর্জির জবাবে হাইকোর্ট প্রশাসনের কাছে জানতে চায়, শুধুমাত্র করোনা রোগীদের জন্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজকে ব্যবহার করতে এখনই পদক্ষেপ করা কি সম্ভব। একইসঙ্গে করোনা মোকাবিলায় সেটিকে গড়ে তোলার জন্য় চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত টেস্ট কিট ও সুরক্ষা বিধির বন্দোবস্ত করে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি করা যাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশাসনের কাছে জানতে চায় হাইকোর্ট।