ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীকে কলকাতায় গণপিটুনি। তার জেরে মৃত্যু হল ওই ব্যবসায়ীর। এছাড়াও একজনের অবস্থা গুরুতর। তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নকল সোনা বিক্রির সন্দেহে স্থানীয় বাসিন্দারা দুজনকে ধরে মারধর করেন বলে অভিযোগ। দুজন রাজস্থান থেকে এসেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বেহালার পর্ণশ্রী এলাকার ধর্মরাজতলা মোড়ে।
আরও পড়ুন: লিভ–ইন পার্টনারের সম্মান বাঁচাতে গিয়ে খুন যুবক, বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা নিউটাউনে
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম মহেন্দ্র সিং (৫৫) এবং আহত ব্যক্তির নাম দীপক সিং (৩৩)। দু’জনেই রাজস্থানের বাসিন্দা ও একে অপরের আত্মীয়। রবিবার ভোরে ধর্মরাজতলা মোড়ে তাঁদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে মহেন্দ্রকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দীপক এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ সূত্রে খবর, দীপকের বয়ানের ভিত্তিতে খুন ও খুনের চেষ্টা সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই অভিযোগে ইতিমধ্যে সঞ্জীব কর্মকার, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, চন্দন ঘোষ সহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এফআইআরে আরও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের নামও যুক্ত হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, রাজস্থানের এই দুই ব্যবসায়ী স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে সোনার গয়নার মতো দেখতে নকল অলঙ্কার বিক্রি করেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই প্রতারণা বুঝে ফেলেই ক্ষুব্ধ হয় অভিযুক্তরা। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তদের মধ্যে বিশ্বজিৎ বিশ্বাস দুই ব্যবসায়ীকে সেখানে ডেকে পাঠান। এরপর সেখানেই দু’জনকে মারধর করা হয় বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) রূপেশ কুমার জানিয়েছেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মারধরের পর ওই দুই ব্যবসায়ীকে ফেলে রাখা হয়। মহেন্দ্রের শরীরে রক্তের চিহ্ন না থাকায় মনে করা হচ্ছে, অন্য জায়গায় খুন করে মৃতদেহ ওই জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনার সময় এলাকার কোনও বাসিন্দা কিছু দেখেছেন বলে জানাতে চাননি। কেউ কেউ জানিয়েছেন, তাঁরা আহতদের আগে কখনও দেখেননি।
পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই নকল সোনার অলঙ্কারগুলি বাজেয়াপ্ত করেছে। ঘটনায় গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখাকে তদন্তে যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীরা আরও জানাচ্ছেন, অভিযুক্তদের প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত সরাসরি হামলার কোনও ভিডিয়ো সামনে আসেনি। উল্লেখ্য, গত বছর জুনেও কলকাতা শহরেই দুই যুবককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের একবার শহরের বুকে ভিনরাজ্যের ব্যবসায়ীকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।