স্টেশনে বসে নিজের মোবাইলে চোখ রাখা যে এত বড় অপরাধ, তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি যুবক। শনিবার সকালে পূর্ব বর্ধমানের সমুদ্রগড় স্টেশনে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার পর এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মনে। অভিযোগ, সিভিক ভলান্টিয়ারদের ‘দাদাগিরি’তে এক যুবকের ওপর নেমে আসে ভয়াবহ অত্যাচার। তারফলে কাটা গেল যুবকের একটি হাতের আঙুল! ওই যুবকের নাম আবদুল রহমান।
আরও পড়ুন: মোবাইল চুরি সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, সিভিক সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ঘটনাটি ঘটেছে পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত সমুদ্রগড় স্টেশনে। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল রহমান সকালবেলা স্টেশনের এক বেঞ্চে বসে মোবাইল ঘাঁটছিলেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। সেই সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রেল পুলিশের অধীনস্থ সিভিক ভলান্টিয়াররা এসে তাঁর ফোন কেড়ে নেন। কেন ফোন ব্যবহার করছেন? এই প্রশ্ন তুলে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। অভিযোগ, মুহূর্তের মধ্যে কথা কাটাকাটি বচসায় পরিণত হয় এবং সিভিক কর্মীরা তাঁকে জোর করে টেনে নিয়ে যান প্ল্যাটফর্মের এক কোণে। সেখানেই ঘটে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি। অভিযোগ, একটি কোলাপসিবল গেটের কাছে তাঁর হাত রেখে ভারী কিছু দিয়ে এমনভাবে আঘাত করা হয়, যাতে এক ঝটকায় আঙুলের উপরের অংশ ছিঁড়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রহমান। আশপাশের লোকজন ছুটে এলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
জখম যুবককে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে কাটা আঙুল জোড়া লাগানো সম্ভব হয়নি। পরে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কালনা হাসপাতালে। সেখানে তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সমুদ্রগড় স্টেশনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। স্টেশনে আসে নাদনঘাট থানার পুলিশ, জিআরপির আধিকারিক এবং রেল পুলিশ।
অন্যদিকে, ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে জিআরপি। তাদের বক্তব্য, ওই যুবকের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাঁকে পাশে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। তখনই গেটের ধাতব অংশে অসাবধানতাবশত তাঁর আঙুল কেটে যায়। সিভিক ভলান্টিয়ারদের তরফে মারধরের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে।
রেল পুলিশ জানিয়েছে, স্টেশনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এই ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়েই উঠছে গুরুতর প্রশ্ন। একজন যাত্রীকে শুধুমাত্র মোবাইল ব্যবহারের অভিযোগে এইভাবে শাস্তি দেওয়ার অধিকার তাঁদের আছে কি না, তা নিয়েও জনমনে ক্ষোভ চরমে।