এই দিনটার জন্য ফি–বছর মুখিয়ে থাকেন রাজ্যের খেটে–খাওয়া মানুষগুলো। কল–কারখানা, পরিবহণ–সহ বিভিন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী ও শ্রমিকদের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব বিশ্বকর্মা পুজো। কিন্তু এ বছর উদ্যাপনের সেই চেনা ছবি যেন উধাও।করোনা সংক্রমণ রোধে জারি করা লকডাউনে বন্ধ হয়ে পড়ে অনেক কল–কারখানা, পরিবহণ মাধ্যম। আনলক পর্বে এ সব কিছুটা স্বাভাবিক হলেও আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে মূল স্রোতে এখনও অনেকের ফেরা সম্ভব হয়নি। রয়েছে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি। তাই ব্যারাকপুর থেকে বহরমপুর, বীরভূম থেকে বাঁকুড়া— সর্বত্র ফিকে শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মার আরাধনা।পুজোর আয়োজনে ভাঁটা পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম জনবহুল এলাকা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। এখানের বেশিরভাগ জুট মিল বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। যা কিছু কল–কারখানা খোলা তাতে প্রায় অর্ধেক শ্রমিক নিয়ে কোনওমতে পাওয়া সামান্য বরাতের কাজ চলছে। যেখানে এইসব অঞ্চলে সপ্তাহখানেক আগে থেকেই উৎসবের তোড়জোড় শুরু হয়ে যেত সে জায়গায় কোনওমতে নমো নমো করে সারা হচ্ছে পুজো।ওদিকে, বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে তিনদিনের মেলা বসত বহরমপুরে। আয়োজনে বহরমপুরের পঞ্চাননতলায় পাশাপাশি থাকা তিনটি ট্রাক ইউনিয়নের দফতর। কার মণ্ডপ কত বড়, কার বিশ্বকর্মা কত ফুট— এই নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলত তৃণমুল, কংগ্রেস ও সিটু–র ট্রাক ইউনিয়নের। করোনা আবহে সেই প্রতিযোগিতা উবে গিয়েছে। পুজো হচ্ছে, কিন্তু সেই উত্তেজনা, আবেগের দেখা নেই।পাথর শিল্পাঞ্চলে ঘেরা বীরভূমেও এবার একই ছবি। বছরের একটা দিন আনন্দ করে কাটাতেন শ্রমিক–মালিকপক্ষ। কিন্তু বিগত কয়েকবছর ধরে শিল্পের বেহাল অবস্থায় সেই আনন্দে ভাটা পড়েছে। একসঙ্গে এলাহি খাওয়া–দাওয়া, ঘুড়ি ওড়ানো— সব যেন হারিয়ে গিয়েছিল। তবু তার রেশ বজায় ছিল পুজোর দিনগুলিতে। কিন্তু এবার করোনা আবহে রামপুরহাট থানার প্রায় ২০০ পাথর ভাঙার কারখানা যেন খাঁ খাঁ করছে। যন্ত্র পুজো করেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন মালকপক্ষ। কারখানায় পা–ও রাখেননি বেশিরভাগ শ্রমিক।প্রায় শ পাঁচেক পুজোর জায়গায় হাতে গোনা কয়েকটি পুজো হচ্ছে বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া ও বিষ্ণুপুর শিল্পাঞ্চলে। সপ্তাহ জুড়ে আনন্দ নেমে এসেছে কয়েক ঘণ্টায়। মূলত বাঁকুড়ার বড়বাজার বাসস্ট্যান্ড, লালবাজার এলাকায় গ্যারেজ পট্টিতে বড় পুজো হত। কিন্তু এ বছর সামান্য কয়েকটি পুজোয় দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন শ্রমিক, রিকশা ও টোটোচালকরা।