শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদের কান্দি শহরে নিজের বাড়ি থেকেই এক যুবতী চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। যা নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মৃতা চিকিৎসকের নাম পৌলমী বিজয়পুরী(৩১)। তিনি কান্দি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা। শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ পুলিশ বাড়ি থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার করে। আর ময়নাতদন্তে পাঠায়। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। তবে পুলিশ জানতে পেরেছে, চিকিৎসক পিতার সঙ্গে তুমুল ঝামেলা হয় চিকিৎসক কন্যার ওই রাতে। যা পুলিশকে চেপে গিয়েছেন মৃতার বাবা বলে অভিযোগ। সেটা পুলিশ জানতে পেরেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে।
এদিকে ওই ঝামেলার পরই আত্মহত্যা করেন চিকিৎসক পৌলমী বিজয়পুরী। তখন ওই পড়শিরা বাড়ি থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পান। সেটাই পুলিশকে তাঁরা জানিয়ে দেন। এই মেয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবীণ চিকিৎসক প্রশান্ত বিজয়পুরী। তাঁকে আগলে রেখেছেন স্ত্রী। দিদির দেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি করেন ছোট ভাই। দিদি যে এমন একটা কাণ্ড করবেন সেটা ভাবতে পারেননি উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া। বাবার সঙ্গে ঝগড়া এবং তারপরে দোতলার ঘরে উঠে গিয়ে ভাইয়ের কাছেই পৌলমী খাবার খেতে চেয়েছিলেন। খাবার আনতে একতলার রান্নাঘরে যখন ভাই যান তখনই সব শেষ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: কেওড়াতলা মহাশ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে, পরিষেবা মিলবে না কবে?
অন্যদিকে কান্দি ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পৌলমী স্থানীয় বহড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ছিলেন। প্রথম পোস্টিং এখানেই ছিল। প্রায় দু’বছর আগে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। মৃতার বাবা প্রশান্ত কুমার বিজয়পুরীও স্থানীয় বড়ঞা ব্লক প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক। ওই রাতে হঠাৎ একদিকে ঝগড়া অপরদিকে কান্না কেন ঘটল? তা খুঁজছে পুলিশ। কান্নাকাটি শুনতে পেয়ে প্রতিবেশীরা ভিড় করেন। দোতলার ঘরে চিকিৎসককে ঝুলন্ত অবস্থায় তখন দেখা যায়। তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে এমন কী ঘটল? জীবন শেষ করে দিতে হল! এটাই সকলকে ভাবাচ্ছে। সূত্রের খবর, পছন্দের পুরুষকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন পৌলমী। তাতে বাধা দেওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
এছাড়া এই নিয়েই সেই রাতে বাবা–মেয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়েছিল। যা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন চিকিৎসক। কে ওই যুবক? এটাও এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কান্দির এক চিকিৎসক বলেন, ‘পৌলমী সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। কর্তব্যে অবহেলা করতেন না। প্রত্যেক রোগীকে ধৈর্য্য ধরে দেখে চিকিৎসা করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনওদিন কোনও রোগী একটিও অভিযোগ করেনি। হঠাৎ তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হতবাক করেছে।’ এই চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার মাজিদ ইকবালের বক্তব্য, ‘পারিবারিক সমস্যার জেরে উনি আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ে করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’