এক বিধবা তরুণীর সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ারের বিয়ে দিলেন থানার 'বড়বাবু'। নিজের উদ্যোগেই করলেন সমস্ত ব্যবস্থাপনা। থানার মধ্যেই বসল বিয়ের আসর, বাজল সানাইের সুর, কবজি ডুবিয়ে ভূরিভোজ সারলেন নিমন্ত্রিতরাও। সমস্ত নিয়ম রীতি মেনে চারহাত এক করা থেকে শুরু করে, বাকি সব আয়োজন - শোনা যাচ্ছে বরকর্তার মতোই সেসব সামলেছেন থানার ওই 'বড়বাবু'ই। তাঁকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন সহকর্মীরাও।
ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়া জেলার চাপড়া থানায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে - প্রায় চার বছর আগের ঘটনা। ক্যান্সারে আক্রান্ত স্বামীকে হারান মামনি ঘোষ নামে এক তরুণী। তাঁর একটি নাবালক ছেলেও রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে অথৈ জলে পড়েন ওই তরুণী। কোনও মতে চালাচ্ছিলেন সংসার। সঙ্গে ছিল ছেলেকে মানুষ করার বিরাট দায়িত্ব। তাছাড়া, মামনির বয়সও কম। অকালে স্বামীকে হারানোর পর তাঁর নিজের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে যায়।
এই মামনির সঙ্গেই রথীন হালদারে বিয়ে দেন চাপড়া থানার আইসি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়। রথীন পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁর বাড়ি কড়ুইগাছি গ্রামে। থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এর ফলে মামনি যেমন নতুন সংসার পেলেন, তেমনই রথীনও তাঁর জীবনসাথীকে পেলেন। সকলেরই আশা, আগামী দিনে এই পরিবারটি সুখে শান্তিতে থাকবে।
সেই আশাতেই নবদম্পতিকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেছেন চাপড়া থানার আইসি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়। বিয়ে উপলক্ষে থানা চত্বর সাজানো হয়েছিল ফুল, মালা ও আলোকসজ্জায়! চারিদিকে সানাইয়ের সুর বেজে উঠতেই ধীরে ধীরে থানায় আসতে শুরু করেন নিমন্ত্রিতরা। তাঁদের ভূরিভোজের ব্যবস্থাও ছিল।
নিমন্ত্রিতরা সকলেই নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করেছেন, তাঁদের শুভকামনা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, তাঁরা চাপড়া থানার পুলিশকে, বিশেষ করে আইসি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়কেও সাধুবাদ জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে একপ্রকার অসহায়ের মতো দিন কাটছিল মামনি ও তাঁর সন্তানের। চাপড়া থানার পুলিশ যেভাবে মা ও তাঁর নাবালক সন্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে, যেভাবে রথীনও মামনি ও তাঁর ছেলেকে আপন করে নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই আচরণকে প্রগতিশীল ও মানবিক বলেই মনে করছেন এলাকাবাসী। তাঁরা চান, এভাবেই যেন সামাজিকভাবে পুলিশ প্রশাসন সবসময় তাঁদের পাশে থাকে।
রথীন ও মামনিও এভাবে থানার মধ্যেই তাঁদের বিয়ের আয়োজন করার জন্য শ্রদ্ধেয় 'বড়বাবু' এবং তাঁর সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। তাঁদের বক্তব্য, থানার লোকজন পাশে না থাকলে তাঁদের পক্ষেও হয়তো এত সহজে নতুন জীবন শুরু করা সম্ভব হত না।