বর্ষার শুরুতেই জলযন্ত্রণায় নাজেহাল পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অংশ। বিশেষ করে ঘাটাল মহকুমার চেহারা কার্যত জলবন্দি শহরের মতো। দিন কয়েকের টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর জল উপচে পড়েছে। গ্রাম থেকে শহর সব জায়গাতেই জল থৈ থৈ। এই পরিস্থিতিতে ন্যূনতম ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে সাধারণ মানুষ। কিছুদিন আগেই ঘাটালের মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিলেন দেব। গতকাল বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন বছরের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছেন। এমন সময় কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠালেন ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক তথা তারকা অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
আরও পর: বন্যা পরিস্থিতি ‘ম্যান মেড’, সরব মমতা, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের সময় বেঁধে দিলেন
ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই তীব্র তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে সাংসদ দীপক অধিকারী দেবকে দায়ী করা হচ্ছে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে। পাল্টা দেব নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সহানুভূতির অভাবেই ঘাটালের উন্নয়ন থমকে রয়েছে।এই বিতর্কের মধ্যেই হিরণ তাঁর চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ঘাটাল এখন পুরোপুরি জলমগ্ন। বহু মানুষ ঘরছাড়া। অথচ ন্যূনতম ত্রাণসামগ্রী পর্যন্ত পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। তিনি কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ জানিয়েছেন, অবিলম্বে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
প্রসঙ্গত, ঘাটালের দীর্ঘদিনের সমস্যার নাম ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’। বহু বছর ধরেই এই প্রকল্পের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, পরিবেশবিদ থেকে জনপ্রতিনিধিরা। বন্যা নিয়ন্ত্রণে এই মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলাতে পারে বলে মনে করা হয়। এই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার বিধানসভাতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গলা তোলেন। তিনি স্পষ্ট জানান, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান অনেক আগে হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। ১৫০০ কোটি টাকা বাজেট রাজ্য সেই কাজ করছে বলে তিনি জানান। আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মেদিনীপুর অঞ্চলের মানুষকে বর্ষাকালে আর জলের মধ্যে ভাসতে হবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ঘিরেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে। এরই মাঝে বিধায়ক হিরণের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাওয়ার এই পদক্ষেপ নতুন মাত্রা যোগ করল রাজনৈতিক আলোচনায়।বস্তুত, ঘাটালের মতো প্লাবনপ্রবণ এলাকায় প্রতিবছরই বর্ষায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। রাস্তা, ঘরবাড়ি তো বটেই, স্কুল-হাসপাতাল পর্যন্ত জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তাই স্থায়ী সমাধান খুঁজে বার করাই এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।