স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য বিবাদ চলছিল। আর তার জের গড়াল থানায়। আর তখনই সামনে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভুয়ো নথির সাহায্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই ব্যক্তিকে। ধৃতদের নাম কুরবান মণ্ডল এবং ইমরান হোসেন। জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এই গ্রেফতার বলে জানা গিয়েছে। ভুয়ো পরিচয় দিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বসবাস করছিল এই দু’জন। সহযোগী ইমরান হোসেন গোটা পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার দুপুরে এগরা থানায় এক গৃহবধূ অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ, স্বামীর সঙ্গে এক ব্যক্তির টাকা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। তাতে তিনি ভয় পাচ্ছেন। আবার স্বামীও তাঁর উপর অত্যাচার করছে। এগরা থানার পুলিশ এই অভিযোগের তদন্তে নেমে এগরা–১ ব্লকের ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র গ্রাম পঞ্চায়েতের মির্জাপুর বাজারের বাসিন্দা সুকুমার মান্নার বাড়িতে যায়। সেখানে অভিযোগকারণীর স্বামী কুরবান মণ্ডল এবং ইব্রাহিম হোসেন নামে তাঁর এক সঙ্গীর পরিচয়পত্র দেখতে চান তদন্তকারীরা। কুরবান নিজের পরিচয়পত্র দেখায়। কিন্তু ইব্রাহিম কোনও নথি দিতে পারেননি। প্রায় একমাস ধরে এগরায় স্ত্রীদের সঙ্গে বসবাস করছিল এই দু’জন। কুরবান নিজেকে আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রেতা হিসেবে পরিচয় দিত। আর ইমরান রাজমিস্ত্রির ছদ্মবেশে ঘাঁটি গেড়েছিল।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত কমিটি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করল নবান্ন, সময় নষ্ট না করার বার্তা
অন্যদিকে তাদের কথাবার্তা শুনে পুলিশের সন্দেহ হয়। তখন তাদের জেরা করতেই সামনে আসে, ৬ মাস আগে অবৈধ পথে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করে ইব্রাহিম–সহ পাঁচ বাংলাদেশি। ইব্রাহিমকে এবার গ্রেফতার করে পুলিশ। আর তাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কুরবান মণ্ডলকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। এই আবহে দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কুরবান মণ্ডলের স্ত্রী পালিয়ে গিয়েছে। তাদের এখন খোঁজ করছে পুলিশ। কুরবান ও তার স্ত্রী মুক্তা বিবির মধ্যে অশান্তি চরমে ওঠে। কিন্তু পুলিশ এসে যাওয়ায় কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ে। তখনই চম্পট দেয় মুক্তা বিবি।
এছাড়া ধৃত ইব্রাহিম বাংলাদেশের খুলনার যশোরের বাসিন্দা। আর কুরবান উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় থাকলেও সে আগে এসেছে বাংলাদেশ থেকে। তারপর এখানে একটা থাকার বন্দোবস্ত করে। তবে জেরায় ইব্রাহিম জানিয়েছে, বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতিতে পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়াই স্ত্রী–সন্তান নিয়ে এপার বাংলায় ঢোকে। আর তাতে সাহায্য করে কুরবান মণ্ডল। কুরবানের সঙ্গে এই কাজ নিয়েই ঝগড়া চলছিল তার স্ত্রী মুক্তা বিবির। প্রথমে বনগাঁ, তারপর বজবজ এবং মেটিয়াবুরুজে ছিল ইব্রাহিম। সেখান থেকে আবার কুরবানের হাত ধরে এগরায় বাড়ি ভাড়া করে বসবাস শুরু করে সে। এই কুরবানের সঙ্গে এলাকা ঘুরে আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রি করত ইব্রাহিম। আর ব্যবসার টাকার ভাগ নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। বাড়িমালিক সুকুমার মান্নার বক্তব্য, ‘প্রায় একমাস আগে সস্ত্রীক কুরবান মণ্ডল আমার বাড়ি ভাড়া নেয়। তারা পরিচয়পত্রও দিয়েছিল। তবে যাকে বাংলাদেশি বলা হচ্ছে, সে কদিন আগে আমার বাড়িতে আসে। ওকে কাজের সঙ্গী বলেছিল কুরবান।’