পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলিকে 'অশান্ত এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করার দাবি তুললেন বিজেপি লোকসভার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। এই মর্মে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি লিখেছেন। সঙ্গে তিনি অনুরোধ করেছেন যে, হিন্দুদের উপর বারবার সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগের কারণে নির্দিষ্ট কিছু সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে AFSPA-এর (সৈন্য বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন) আওতায় আনা হোক। বাংলার হিন্দুদের পরিস্থিতির সঙ্গে ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের গণনির্বাসনের তুলনা টেনেছেন বিজেপি সাংসদ। প্রসঙ্গত, নাগা পাহাড় এবং সংলগ্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ মোকাবিলা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীর, মণিপুর সহ উত্তরপূর্বের একাধিক রাজ্যে জারি আছে এই আইন। (আরও পড়ুন: ‘দাস পরিবারকে হত্যা করা হল, বাংলা জ্বলছে… আর ইউসুফ পাঠান চা খেয়ে আনন্দ পাচ্ছেন’)
আরও পড়ুন: 'বাংলা ভাগের কথা মনে পড়ছে…', WAQF হিংসা নিয়ে মমতাকে তোপ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
জ্যোতির্ময় দাবি করেন, মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদিয়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হিন্দুরা নির্যাতিত। তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূল কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতির কারণে আইনৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এই আবহে অমিত শাহকে লেখা চিঠিতে জ্যোতির্ময় লেখেন, 'গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদেই হিন্দুদের ৮৬টি বাড়ি ও দোকানে লুটপাট করে ধ্বংস করা হয়েছে। খুন হয়েছে দুই সাধারণ মানুষ। তাঁদের পানের বরজেও হামলা করা হয়। কিন্তু এট কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং মালদা নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এটা তৃণমূলের তোষণ রাজনীতির জেরে হয়েছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা যে ভেঙে পড়েছে তা ওয়াকফ আইন বিরোধী আন্দোলনের ফলে আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।' (আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে WAQF হিংসার বলি হরগোবিন্দ-চন্দন CPIM সমর্থক ছিলেন, দাবি বামফ্রন্টের)
আরও পড়ুন: ফারাক্কা ও দক্ষিণ মালদায় নতুন করে ঝামেলার অভিযোগ, BSF-এর সঙ্গে কথা বললেন BJP MLA
আরও পড়ুন: 'ধর্মনিরপেক্ষতার ট্যাবলেট খাইয়ে...', ওয়াকফ হিংসা নিয়ে অভিষেককা পালটা সুকান্তর
বিজেপি সাংসদ চিঠিতে আরও লেখেন, 'পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি এমনই হয়ে গিয়েছে যে অবশেষে হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নেমেছে। এই জেলাগুলিতে হিন্দুদের পরিস্থিতি ১৯৯০ সালের কাশ্মীরি হিন্দুদের গণনির্বাসনের ইতিহাস মনে করাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে আফস্পা জারি করা হোক।' উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল ১১ এপ্রিল থেকে। এই হিংসার জেরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কিশোর আছে। সে গত ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এদিকে ১২ এপ্রিল সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ স্থানীয়দের। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এলাকায় এখন বিএসএফ টহল দিচ্ছে। জানা গিয়েছে, সামশেরগঞ্জের রানিপুরের জাফরাবাদে ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগ, বাবা ও ছেলেকে প্রথমে পেটানো হয়েছে, তারপর ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। এরপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়ি ও টোটো। অভিযোগ, পুলিশকে বারবার ফোন করা হলেও পুলিশ আসেনি।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে BSF চেয়েছিল পুলিশই, আর কুণাল বলছেন - বিজেপির এজেন্সির প্ররোচনা...
এদিকে ১২ এপ্রিল ধুলিয়ান পুরসভাতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এদিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয় এবং পরে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ধুলিয়ানে একটি শপিংমলে লুটপাট চালানো হয়। এদিকে ফারাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলামের দাদা আলির বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী বিধায়ককেও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। হেনস্থা করা হয় বিধায়ককে। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুরের অফিসেও হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। এদিকে মুর্শিদাবাদে হিংসার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি এলাকায় টহল দিচ্ছে বিএসএফ।